দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়েও জাতিগত শংসাপত্র পাচ্ছেনা অনেক আদিবাসী চা শ্রমিক

জলপাইগুড়ি, ১৬ এপ্রিল: মানুষের সুবিধার জন্য দুয়ারে সরকার ক্যাম্প শুরু হলেও খোদ তপশিলি উপজাতিভুক্ত বহু আদিবাসী মানুষ আবেদন করেও এসটি সার্টিফিকেট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ।রবিবার জলপাইগুড়ির বন্ধ রায়পুর চা বাগানে সেই সমস্যাই দেখা গেল । যদিও এই সমস্যা শুধু রায়পুর চা বাগানের নয়, ডুয়ার্সের বহু চা বাগানেও দেখা যাচ্ছে এই সমস্যা ।

চা বাগানের শ্রমিকদের অভিযোগ তিন চারবার করে আগের দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে আবেদন করেও মিলছেনা এই এসটি শংসাপত্র । যদিও সাম্প্রতিক সময়ে অনেক তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষজন অন্য রাজ্য থেকে ডুয়ার্সের বিভিন্ন চা বাগানে এসে বসবাস করাতে তাদের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে বলে প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে ।

যদিও সরকারি সুত্রে জানা গিয়েছে অধিকাংশই প্রয়োজনীয় নথি জমা দিয়ে পেয়ে যাচ্ছেন শংসাপত্র ।কয়েকজনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে না পাড়ায় এই সমস্যা হচ্ছে ।অথচ জলপাইগুড়ি সদর মহকুমায় গত ৫ টি দুয়ারে সরকার ক্যম্পে মোট ২ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬৪৬ টি জাতিগত শংসাপত্র প্রদান করে রাজ্যের মধ্যে এই পরিষেবায় প্রথম হয়েছে বলে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন সুত্রে জানানো হয়েছে ।

জেলার যে সকল চা বাগান রবিবার ছুটি থাকে সেই চা বাগানে রবিবার একটি বাড়তি দিন হিসেবে   দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প করার ব্যবস্থা করেছে জেলা প্রশাসন । বন্ধ রায়পুর চা বাগানের টি জি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এদিন ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় ।

রায়পুর চা বাগানের মহিলা শ্রমিক সুকুরমনি সাওয়াসি জানান, “এই নিয়ে তিনবার তপশিল উপজাতির জাতিগত শংসাপত্র পেতে দুয়ারে সরকারে আবেদন করলাম ।এইভাবে শংসাপত্র মিলছেনা । কাগজে কি ভুল আছে তাও আগে জানানো হয়নি ।আমরা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প যেমন ভাতা, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি”।

অন্যদিকে ডেঙুয়াঝাড় চা বাগানের শ্রমিক সরিতা বার্লা জানান, “কি করবো বলুন ? যে ধরনের প্রমানপত্র চাওয়া হচ্ছে তা আমার কাছে নেই । তাই গত তিনটে ক্যাম্পে কাগজপত্র জমা দিয়েও জাতিগত শংসাপত্র মেলেনি ।তাই আবার দিলাম ।যাদের কাছে বংশগত জাতিগত শংসাপত্র নেই তারা আবেদন করেও পাচ্ছেনা নিজের শংসাপত্র ।”

রায়পুর চা বাগানটি পাতকাটা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত ।পঞ্চায়েত প্রধান, প্রধান হেমব্রম জানান, “অনেকেই  তিন চারবার করে আগের দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে আবেদন জমা করেও পাচ্ছেন না শংসাপত্র ।রবিবার সুষ্ঠুভাবে ক্যাম্প হয়েছে । কিন্তু বাবার বংশে জাতিগত শংসাপত্র চাওয়া হচ্ছে ।কারও কাছেই সেই কাগজ নেই ।অনেকের জন্ম সার্টিফিকেট নেই ।আমার পঞ্চায়েতে ৩০ হাজার বাসিন্দার মধ্যে ১০ হাজারের বেশি তপশিল উপজাতি রয়েছেন ।তাদের অনেকেরই জাতিগত শংসাপত্র হচ্ছেনা কেন”?  এই শংসাপত্র পেতে নিয়মে সরলীকরনের দাবী জানান পঞ্চায়েত প্রধান ।

এখন প্রশ্ন উঠছে তাহলে এতো মানুষ কেন পাচ্ছেন না এসটি সার্টিফিকেট । আসলে ঝাড়খন্ড ও বিহার থেকে অনেকে এসে এখানে বসবাস শুরু করেছেন ।তাই এই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে, পারিবারিক জাতিগত শংসাপত্র দেখাতেও পারছেন না ।এই ধরনের শংসাপত্র প্রদানে সরকারি নিয়ম খুবই কঠিন বলে বহিরাগত বা স্থানীয়দের কাছেও প্রয়োজনীয় নথি না থাকায় তাদের দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা বলে প্রশাসন সুত্রে জানানো হয়েছে ।

জেলা শাসক মৌমিতা গোদারা বসু জানান, অধিকাংশ চা বাগানেই রবিবার ছুটি থাকে বলে স্পেশাল দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প করার ব্যবস্থা করা হয়েছে ।শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কি প্রয়োজন তা জেনে আবেদন করতে বলা হচ্ছে ।তবে এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা কেউ হলে সেই ঘটনা স্থানীয়স্তরে খতিয়ে দেখে তবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে শংসাপত্রের বিষয়ে, বলে জেলা শাসক জানান ।

নিউজ টাইম চ্যানেলের খবরটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
Inform others ?
Share On Youtube
Show Buttons
Share On Youtube
Hide Buttons
Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial
Facebook
YouTube