আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে বিডিও হওয়ার পথের গল্প

।। রাজীব ঘোষ ।।

স্ত্রীর কানের দুল বিক্রি করে ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেছিলেন বাবা। সেই পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে হতে যাচ্ছে বিডিও।খুশি এলাকাবাসী।

আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে প্রখর ইচ্ছে শক্তি ও কঠোর পরিশ্রমে ডবলু বি সি এস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিডিও হতে চলেছেন পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে কেশব দাস ।বাড়ি মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নং ব্লকের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরদমনগর গ্রামে।
এই কথা এলাকায় জানাজানি হতেই আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবেরা ফুলের তোড়া ও মিষ্টি নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে ছুটে যাচ্ছেন কেশবের বাড়িতে।এলাকায় খুশীর বার্তা ছড়ি পড়েছে।ছেলের সাফল্যের বাবা মা ও আত্মীয়স্বজনদের বুক গর্বে ভরে উঠেছে।

কেশব দাস জানান,২০২০ সালে দ্বিতীয়বার ডবলু বি সি এস পরিক্ষায় বসেন।চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।সে ডবলু বি সি এস এক্সিকিউটিভ ‘A’ বিভাগে পশ্চিমবঙ্গে ২৭ Rank করেছেন।তিনি আরো জানান,২০১১ সালে হরদমনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭ শতাংশ নাম্বার পেয়ে মাধ্যমিক,২০১৩ সালে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৭৬ শতাংশ নাম্বার পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।এরপর মালদা কলেজে সংস্কৃত অনার্স নিয়ে ভর্তি হন।২০১৬ সালে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে স্নাতক পাশ করেন।২০১৮ সালে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৭৭ শতাংশ নাম্বার পেয়ে এম এ পাশ করেন। মালদা হোস্টেলে থেকে পরিক্ষার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতেন।আর্থিক অভাবের কারণে সেই রকম কোচিং নিতে পারেননি।তবে নিজে টিউশন পড়িয়ে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন।তার ছোট থেকে ইচ্ছে ছিল শিক্ষক হওয়ার।কঠোর পরিশ্রমে ডবলু বি সি এস এর সাফল্য পায় সে।

কেশব দাসের বাবা জ্ঞানবান দাস জানান,তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে।কেশব ছোট ছেলে।সে ছোট থেকেই ছিল কঠোর পরিশ্রম ও মেধা।তাকে পড়াশোনার জন্য কখনো বকাঝকা করতে হয়নি।
তার সাফল্যে গর্বিত আজ সম্পূর্ণ হরিশ্চন্দ্রপুর বাসি।তিনি আরও জানান,সে একজন পরিযায়ী শ্রমিক। লকডাউনের পর থেকে বাড়িতে বসে রয়েছেন।দিনমজুর ও জমিতে কাজ করে কোনোরকমে সাংসারিক খরচের পাশাপাশি ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতেন।এই সামান্য আয়ে হিমসিম খেতে হয় তাকে।ছেলের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে গিয়ে ব্যাঙ্ক থেকে কৃষি ঋণ নিতে হয়েছে তাকে এমনকি তার স্ত্রীর কানের সোনার দুল পর্যন্ত বিক্রি করে দিতে হয়েছে। যা এখনো পর্যন্ত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি সে। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর ছেলের আবদার ছিল একটি নতুন সাইকেলের তাও তিনি কিনে দিতে পারেননি।প্রতিদিন প্রায় ছয় কিলোমিটার পায়ে হেঁটে ছেলে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যেত। মালদা হোস্টেলে থাকাকালীন ছেলে একটি ল্যাপটপের আবদার করলেও সেটাও দিতে পারেননি।সবার ঘরেই এরকমের সন্তান জন্ম হোক বলে তিনি আশীর্বাদ করেন।

নিউজ টাইম চ্যানেলের খবরটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
Inform others ?
Share On Youtube
Show Buttons
Share On Youtube
Hide Buttons
Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial
Facebook
YouTube