
নিউজটাইম ওয়েবডেস্ক : ।। শুভশ্রী মুহুরী ।।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কেড়ে নিয়েছে স্ত্রীকে। স্মৃতিটুকুর পাশাপাশি তাঁকে আরও বেশি করে রেখে দিতে চেয়েছিলেন নিজের কাছে। তাই লক্ষাধিক টাকা খরচ করে স্ত্রীয়ের আদলে সিলিকনের মূর্তি তৈরি করালেন স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে এই রাজ্যে, তাও আবার কলকাতায়। দমদমের কৈখালি নিবাসী তাপস শাণ্ডিল্য, বয়স ৬৫। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী এখন বাড়িতেই থাকেন, একা। এই বৃদ্ধ বয়সে কাছে নেই সঙ্গী। তাই নিরাকার ভালোবাসার থেকেও জলজ্যান্ত স্ত্রীকে চেয়েছিলেন পাশে। অবশ্য এই আকাঙ্খা শুধু তাঁর নয়, তাঁর স্ত্রীও বোধহয় এইভাবেই স্বামীর সঙ্গে, সংসারে আবদ্ধ থেকে যেতে চেয়েছিলেন। স্ত্রী বেঁচে থাকতে, যুগলে ঘুরতে গিয়েছিলেন ইস্কন মন্দিরে। সেখানে স্বামী ভক্তিবেদানন্দের মূর্তি দেখে অবাক হয়েছিলেন তাপস ও তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রাণী। দুজনেই সেই প্রাণোজ্জ্বল মূর্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এমন সময় স্ত্রী ইন্দ্রাণী বলে বসেন, তিনি যদি প্রয়াত হন, তবে তাঁর আদলে যেন ঠিক তেমন মূর্তিই তৈরি করা হয়। স্ত্রী চলে গেলেন ২০২১ সালের ৪ মে, রয়ে গেল কথা। স্ত্রীকে দেওয়া কথা রাখতে চাইলেন তাপস। মূর্তি বানাতে পারেন এমন কারিগরের খোঁজ করতে শুরু করেন। জাদুঘরের জন্য সিলিকনের মূর্তি তৈরি করেন, শিল্পী সুবিমল দাস। তাঁর খোঁজ পেলেন তাপস। কাজটি নিতে রাজি হন শিল্পী সুবিমল। তবে এমন কাজ আগে করেননি, তাই ইন্দ্রাণীর মূর্তি তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে শিল্পীর কাছে। তিনি ছবি ঘেটে ইন্দ্রাণীর চেহারার পুঙ্খানুপুঙ্খ মাপ নিতে শুরু করেন। এই কাজে সাহায্য করেন তাপস। তিনিই তো জানবেন তাঁর স্ত্রীয়ের মুখের মাপ, গভীরতা, বিস্তৃতি। এরপর শরীরের মাপ নেওয়া হল ইন্দ্রাণী যে দর্জির কাছ থেকে জামাকাপড় বানাতেন তাঁর থেকে। ধীরে ধীরে গড়ে উঠল সিলিকনের মূর্তি। খরচ হল আড়াই লক্ষ টাকা। ছেলের বৌভাতে যে ঘিয়ে রঙের অসম সিল্ক পরেছিলেন ইন্দ্রাণী, সেই শাড়িই পরানো হল তাঁর মূর্তিতে। যে গয়নাগুলি পরতে বেশি পছন্দ করতেই ইন্দ্রাণী, সেই গয়নাও উঠল তাঁর মুর্তির গায়ে। তাপসের পরিবারের অনেকেই তাঁর এই ইচ্ছের বিরুদ্ধে ছিলেন। তবুও তাপসের ইচ্ছের কাছে হার মানতে হয় তাঁদের। এখন এই মূর্তিই তাপসের দিনরাতের সঙ্গী। প্রয়াত স্ত্রী মুমতাজের স্মৃতির উদ্দেশে তাজমহল বানিয়েছিলেন শাহজাহান। যা পরবর্তীতে ভারতে ‘সপ্তম আশ্চর্য’র খেতাব পেয়েছে। সেই তাজমহল আর কেউ বানাতে পারেননি। তবে স্ত্রীকে ভালোবেসে তাপসের মতো স্বামীরা যতটুকুই করেছেন, তা ইতিহাসে না হোক, মনের খাতায় রয়ে যাবে যতনে।Latest posts by Subhasree Muhuri (see all)