বিদেশের মাটিতে আয়রন-‘উওম্যান’ কলকাতার দিয়া

নিউজটাইম ওয়েবডেস্ক : চাকরি করে, সন্তান সামলে এবার আয়রন ম্যান খেতাব পেলেন কলকাতার এই মেয়ে। সাঁতার, সাইকেলিং আর দৌড়ের ট্রায়াথলন সম্পূর্ণ করে আয়রনম্যান ৭০.৩’র খেতাব জিতেছেন তিনি।

জানা গিয়েছে, এই আয়রনম্যান খেতাবজয়ীর নাম দিয়া অরোরা (মুখোপাধ্যায়)। তিনি কলকাতার চেতলার মেয়ে। পেশায় তিনি একজন জিওলজিস্ট হলেও স্বামা সন্তান নিয়ে বেশ সুখের সংসার তাঁর। চাকরি, সংসার ওনিজের পাঁচ বছরের মেয়েকে সামলেও এইভাবে আয়রনম্যান হয়ে ওঠার ঘটনায় রীতিমতো হইচই পড়েছে অ্যাথলেটিক্স মহলের।

দিয়ার কথায়, কলকাতার হোলি চাইল্ড স্কুলে পড়াশুনোর সময়ই স্পোর্টসে বিশেষ আগ্রহ ছিল তাঁর। কিন্তু তারপর যোগমায়াদেবী কলেজ, আইআইটি খড়গপুরে ‌যাওয়ার পর সেই স্বপ্ন থেকে পেছনে হাটতে হয় তাঁকে। শুরু হয় জিওলজিস্ট হওয়ার জন্য নতুন ‌যুদ্ধ। এরপরেই পড়া শেষে মুম্বইয়ের এক নামকরা বেসরকারি তেল এবং গ্যাস সংস্থায় শুরু হয় চাকুরিজীবন। তারপর সৌরভ অরোরার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে ও একমাত্র মেয়ে সানভির জন্ম। দীর্ঘ এই ‌যাত্রাপথে থেমে ‌যায় খেলাধুলোর স্বপ্ন। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে চাকরি সূত্রে কুয়েতে থাকা শুরু করতেই পরিবর্তন ঘটে দিয়ার জীবনের। দিয়া দলেন, ‘কুয়েত খুব ছোট একটা দেশ হলেও ওদের অ্যাথলেটিক্সের উপর খুব ঝোঁক। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতাও আয়োজন হয় এখানে। শুরুর দিকে সেখানকার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এবং স্থানীয়দের সঙ্গে পরিচয় বাড়ানোর ইচ্ছাতেই একটা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি। আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয় সেটাই।’

দিয়া আরও জানান, ‘কলেজ স্কোয়ারে আমি সাঁতার শিখেছিলাম। আইআইটিতে পড়াশোনার সময় ক্যাম্পাসে যাতায়াতের জন্য সাইকেল চালানোও শিখতে হয়েছিল। বন্ধুরা যখন জানল, আমি সাঁতার, দৌড়, সাইক্লিং তিনটেই জানি, তখন ২০১৮ সালের দিকে তাঁরা আমায় ট্রায়াথলনের জন্য তৈরি হতে পরামর্শ দেয়। সেখান থেকেই ফের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয়।’

সাধারণত ট্রায়াথলনে প্রতিযোগীদের সাঁতার কেটে এসে সাইকেল চালিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব পেরোনোর পর দৌড়তে হয়। এছাড়া আয়রনম্যান পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে সুপার স্প্রিন্ট, স্প্রিন্ট, অলিম্পিক, হাফ আয়রনম্যানের পর্যায় অতিক্রম করতে হয় প্রতিযোগীকে। এই সমস্ত প‌র্যায় অতিক্রম করেই ট্রায়াথলনের খেতাব জিতেছেন দিয়া। সমুদ্রে ১.৯ কিমি সাঁতার থেকে শুরু করে ৯০ কিমি সাইক্লিং এবং অবশেষে ২১.১ কিমি দৌড়তে হয়েছে দিয়াকে। বিশ্বের মোট ৫৩টি দেশে বিভিন্ন সময়ে এই আয়রনম্যান প্রতিযোগিতার আসর বসে।

সংসার ও মেয়ে সামল কীভাবে এত কঠিন প্রতি‌যোগিতার জন্য প্রস্তুতি নি‌য়েছিলেন তিনি? সেবিষয়ে দিয়া জানান, ‘আমাদের কুয়েতে দিন শুরু হয় বেশ তাড়াতাড়ি। আমি ভোর চারটেয় উঠে আগে রান্না সেরে নিই স্বামী-মেয়ের। তার পর তৈরি হয়ে চলে যাই ট্রেনিং সেন্টারে। সেখানে সাঁতার আর বাকি ট্রেনিং সেরে সকাল সাতটা-সাড়ে সাতটার মধ্যে অফিসে চলে যাই। সপ্তাহান্তে সাইক্লিং করি।’

৭ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে আয়োজিত হয় আয়রনম্যান ৭০.৩ প্রতিযোগিতা। সেখানে অংশগ্রহণ করবেন ভাবলেও স্বামীর ছুটি না থাকায় বন্ধুদের সঙ্গেই দুবাইতে উড়ে ‌যান তিনি। দিয়ার কথায়, ‘আমার কাছে শুধুনাত্র ভয়ের বিষয় ছিল সমুদ্রে সাঁতার কাটার বিষয়টি। কারন আমি এর আগে সমুদ্রে কখনও সাঁতার কাটিনি। তাছাড়া বেশিরভাগ সময় দুর্ঘটনাই সমুদ্রে সাঁতার কাটার সময় ঘটে। তবে আমি খুব সৌভাগ্যবান ‌যে আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গ পেয়েছিলাম। ওদের উৎসাহ না থাকলে এতদূর পৌঁছতেই পারতাম না।’

 

Inform others ?
Share On Youtube
Show Buttons
Share On Youtube
Hide Buttons
Wordpress Social Share Plugin powered by Ultimatelysocial
Facebook
YouTube