কুষ্ঠ রোগে ক্ষয়িষ্ণু হাত পা, ‘আধার’ জটিলতায় আঁধারেই জীবন বৃদ্ধ দম্পতির
3 months ago 1 min read
নিউজটাইম ওয়েবডেস্ক :
কুষ্ঠতে
তিনি যখন আক্রান্ত তখন
মাওবাদী সন্ত্রাসে উত্তপ্ত ঝাড়গ্রাম। মাওবাদীদের
ভয়ে কার্যত কুঁকড়ে থাকত
জঙ্গল অধ্যুষিত এলাকার মানুষজন।
তবে একবার মনের মধ্যে
সাহস যোগাড় করে মেদিনীপুর
হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু
হাসপাতাল আর যাওয়া হয়নি
তাঁর। রাস্তায়
তাঁকে আটকে বেধড়ক মারধর
করেছিল মাওবাদীরা। রক্তাক্ত
অবস্থায় বাড়িতে ফেলে দিয়ে
গিয়েছিল।
ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ার কালোঝরিয়ার বাসিন্দা প্রবীর মল্লিকের জীবনে
সেই যে অন্ধকার নেমে
এসেছিল, তা দূর হয়নি
আজও। জঙ্গলঘেরা
কালোঝরিয়ায় প্রায় ৬০-৭০টি
লোধাশবর পরিবারের বাস। গ্রামের
এক কোণে তিনফুট উঁচু
মাটির দেওয়ালে ছেঁড়া ত্রিপল টাঙিয়ে
যাহোক করে স্ত্রীকে নিয়ে
দিনযাপন করেন প্রবীরবাবু।
সেখানেই রান্না করেন, খাওয়া
দাওয়া করেন, সেখানেই এলিয়ে
দেন ক্লান্ত শরীর। তবে
স্বামী-স্ত্রীর কেউই কোনওরকম সরকারি
সুযোগ সুবিধা পান না। না
পান রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্য। তবে
প্রবীরবাবুকে চেনেন প্রত্যেকেই।
দু’মুঠো চালের জন্য
সরকারি আধিকারিক থেকে শুরু করে
রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তিনি যে
দরবার করেছেন বহুবার।
কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত প্রবীরবাবুর বয়স ভারতীয় গণতন্ত্রের
থেকে খুব একটা কম
নয়। কিন্তু
আধার কার্ড করিয়ে উঠতে
পারেননি আজও। হাত-পায়ের আঙুলগুলো ক্ষয়ে
যেতে যেতে এমন অবস্থায়
পৌঁছেছে, যে বায়োমেট্রিক ছাপ
দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বায়োমেট্রিকের
জটিলতায় রেশনও বন্ধ হয়ে
গিয়েছে প্রবীরবাবুর। স্বামী-স্ত্রী মিলে এতদিন
লোকের কাছে হাত পেতে
ভিক্ষা করে সংসার চালালেও
বার্ধক্যজনিত কারণে তাও আর
সম্ভব হয়ে উঠছে না। এদিকে
চোখের দৃষ্টিও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর
হয়েছে প্রবীরবাবুর। দু’বেলা ঠিক মতো
খাবারও জোটে না আর।
নিকটবর্তী
সরকারি হাসপাতালে ওষুধ না থাকায়
কুষ্ঠর চিকিৎসাও কার্যত বন্ধ হয়ে
গিয়েছে প্রবীরবাবুর। সুযোগ
বুঝে আসক্ত অসহায় শরীর
বেয়ে ওঠানামা করে পোকামাকড়ের দল। সত্যিই
তো, সুযোগ পেলে কেই
বা ছাড়ে! প্রবীরবাবু বলেন,
‘মানিকপাড়া হাসপাতালে কুষ্ঠর ওষুধ নেই। তাই
ওদের কাছে গেলেই ঝাড়গ্রাম
হাসপাতালে যেতে বলে।
কিন্তু এখন আর চোখে
ভালো দেখতে পাই না। তাছাড়া
ঝাড়গ্রাম যে যাবো, সেটুকু
অর্থও নেই।’ ভোট
এলেই গ্রামে চলে আসেন
রাজনৈতিক নেতারা। প্রতিশ্রুতির
বন্যা ছুটিয়ে দেন।
জীবনে এরকম বহু প্রতিশ্রুতিই
শুনেছেন প্রবীরবাবু। তাঁর
বাড়ি থেকে শুরু করে
আধার কার্ড, রেশন, সমস্তকিছুর
বন্দোবস্ত করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু
ভোট ফুরোলে আর খোঁজটুকুও
রাখেন না কেউ।